Here you will see the details of a News or Event

কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি অনুষদের নবীনবরণ অনুষ্ঠিত।

কুড়িগ্রাম, ২৬ অক্টোবর, ২০২৫: কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুড়িকৃবি) কৃষি অনুষদের নবীনবরণ অনুষ্ঠান সফলভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহ: রাশেদুল ইসলাম, কৃষি অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো: আব্দুল আলীম-সহ অন্যান্য শিক্ষকমণ্ডলী আসন গ্রহণ করেন। এরপর কুরআন থেকে তিলাওয়াত এবং গীতা পাঠ করা হয়।

কৃষি অনুষদের অগ্রজ ও অনুজ শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে তিনজন শিক্ষার্থী তাদের বক্তৃতায় সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক, পারস্পরিক সম্মানবোধ ও সহযোগিতা এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি তাদের প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। একই সাথে তারা প্রশাসনের ইতোমধ্যে গৃহীত বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপের প্রশংসা করেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—প্রথম ও দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থীদের জন্য পুরোপুরি আবাসিক ব্যবস্থা, ইন্টারেক্টিভ বোর্ডসহ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ডিজিটাল ক্লাসরুম, পর্যাপ্ত ল্যাব ইকুইপমেন্ট সমৃদ্ধ চারটি ল্যাব এবং ১২০টিরও বেশি বই সমৃদ্ধ একটি লাইব্রেরি। এ সময় শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৪×'স্টুডেন্ট সাপোর্ট সেন্টার'-এরও ভূয়সী প্রশংসা করেন।

উপাচার্য মহোদয় তাঁর বক্তৃতার শুরুতেই ১৯৭১ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত দেশের জন্য যারা প্রাণ দিয়েছেন, সেই সকল শহীদের রূহের মাগফেরাত কামনা করেন। অতঃপর তিনি শিক্ষার্থীদের সুন্দর আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে বলেন, "তোমরা যেভাবে নবীন বরণ করে নিচ্ছ, তা একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে এবং পরবর্তী ব্যাচের শিক্ষার্থীরাও এই ইতিবাচক কাজকে ক্রম প্রবহমান রাখবে, যা ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করবে।" তিনি শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে বলেন, তোমরা যদি নিরলস পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের সাথে লেখাপড়া করো, তাহলে আল্লাহর রহমতে তোমরা নিজ নিজ অবস্থানে সুপ্রতিষ্ঠিত হবে এবং দেশ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এ ছাড়াও তিনি শিক্ষার্থীদের সহ-শিক্ষা কার্যক্রমের (কো-কারিকুলাম অ্যাক্টিভিটি) জন্য তিনটি ক্লাব তৈরির পরিকল্পনার কথা বলেন। একই সাথে তিনি একটি 'প্ল্যান্ট ডক্টরস ক্লিনিক' এবং একটি 'ফিশ ডক্টরস ক্লিনিক' তৈরির কথা উল্লেখ করেন। এই ক্লিনিকগুলোতে কৃষকরা তাদের কৃষি সমস্যার কথা সংশ্লিষ্ট ক্লিনিকে জানাবেন এবং নমুনা নিয়ে আসবেন। এরপর শিক্ষার্থীরা সেই তথ্য এবং নমুনা নিয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় সমাধান দেবেন। এর মাধ্যমে কৃষক তাঁর কাঙ্ক্ষিত কৃষি সমাধান পাবেন এবং শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে নতুন নতুন সমস্যার সমাধান করা শিখবেন।

তিনি আরও বলেন, কৃষি হলো একটি দেশের অর্থনীতির মূল ভিত্তি এবং মানুষের মৌলিক চাহিদা খাদ্যের প্রধান উৎস। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি এটি দেশের শিল্প খাতের জন্য কাঁচামাল সরবরাহ করে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো কৃষিপ্রধান দেশে, কৃষিখাত সরাসরি ও পরোক্ষভাবে বিশালসংখ্যক জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে। সনাতন কৃষি কাজের পাশাপাশি বর্তমানে উচ্চফলনশীল ফসল উৎপাদন, কৃষি প্রযুক্তি (যেমন: আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার), কৃষি গবেষণা ও সম্প্রসারণ, সার-বীজ-কীটনাশক উৎপাদন ও বিপণন, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ (ফুড প্রসেসিং), দুগ্ধ ও মৎস্য খামার, পশুপালন এবং অনলাইন কৃষি বাজার সৃষ্টির মাধ্যমে অসংখ্য নতুন চাকরির ক্ষেত্র (জব সেক্টর) তৈরি হচ্ছে। শিক্ষিত তরুণ-তরুণীরাও এখন বাণিজ্যিক কৃষিতে উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে, যা কেবল আত্মকর্মসংস্থানই নয়, বরং গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে দেশের সার্বিক বেকারত্ব কমাতেও সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। তাই কৃষির আধুনিকায়ন ও বাণিজ্যিকীকরণের মাধ্যমে এর গুরুত্ব আরও বাড়ছে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগও বহুগুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তা ছাড়া সরকারি চাকরি যেমন, বিসিএস কৃষি ক্যাডার, বিভিন্ন কৃষিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানেও কৃষিবিদদের অনেক চাকরির সুযোগ আছে।

এরপর উপাচার্য মহোদয় শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া এবং গবেষণা মাঠ পরিদর্শনের জন্য একটি বাস এবং শিক্ষক-কর্মকর্তাদের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়সহ ইউজিসি (UGC) এবং মন্ত্রণালয়ে গমন, অতিথি শিক্ষক, ইউজিসির সদস্য/কর্মকর্তাদের ক্যাম্পাসে আসা-যাওয়া এবং জরুরি দাপ্তরিক কাজে ব্যবহারের জন্য দুটি মাইক্রোবাসের অনুমোদন প্রক্রিয়াধীন আছে বলে জানান। তিনি দ্রুততম সময়ে স্থায়ী ক্যাম্পাসের জমি অধিগ্রহণসহ ভবন নির্মাণে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দিন-রাত পরিশ্রমের কথা বলেন। সবশেষে, তিনি অগ্রজ-অনুজদের সুসম্পর্ক অটুট রাখার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন এবং কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা নিজেদের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে ঠিক করার পরামর্শ দেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী সহ ক্যাম্পাসের আশেপাশের প্রতিবেশীদের সাথে মানবিক ভালো ব্যবহার করার পরামর্শ দেন এবং নিজেদের মানবিক গুণাবলিকে বিকশিত করার চেষ্টাকে অব্যাহত রাখতে বলেন। ভালো মানুষ হওয়ার জন্য লেখাপড়া যেমন জরুরি, তেমনি মানবিক গুণাবলিও জরুরি।

এদিকে কৃষি অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো: আব্দুল আলীম তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই আদর্শ কৃষিবিদ হওয়ার আশা ব্যক্ত করেন, যারা মাঠ পর্যায়ে যথেষ্ট দায়িত্বের সাথে কাজ করতে পারবেন। এরপর তিনি শিক্ষার্থীদের অবহিত করেন যে তারা যেনো যে কোনো একাডেমিক সমস্যা (সেটা ক্লাস সম্পর্কিত, ল্যাব সম্পর্কিত অথবা লেখাপড়া সম্পর্কিত যে কোনো বিষয়) তাকে জানায়, যেন তিনি দ্রুততম সময়ে সেগুলোর সমাধান দিতে পারেন এবং শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় কোনো সমস্যা তৈরি না হয়। তিনি কৃষির মূল তিনটি কাজ, ফসল উৎপাদন, রোগ বালাই নিয়ন্ত্রণ, এবং নতুন জাতের আবিষ্কার -এর বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

ডিন মহোদয়ের বক্তব্যের পর শিক্ষার্থীরা তাদের অনুষদের একটি প্রেজেন্টেশন এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতিবিজড়িত একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করেন। এরপর শিক্ষার্থীরা হামদ-নাত, গান এবং কবিতা আবৃত্তি পরিবেশন করেন। সবশেষে, উপাচার্য মহোদয়সহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা একটি গ্রুপ ছবি তোলেন।