কুড়িগ্রাম, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫: বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উদযাপিত হলো ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের নবাগত শিক্ষার্থীদের ওরিয়েন্টেশন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ বছর কৃষি ও মৎস্য অনুষদে মোট ৮০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। একই দিনে ওরিয়েন্টেশন এবং প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী হওয়ায় দিনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে ওঠে।
সকাল থেকেই নতুন শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত ছিল পুরো ক্যাম্পাস। সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া এসময় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন উপহার সামগ্রী যেমন, প্রসপেক্টাস, আইডি কার্ড এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোযুক্ত খাতা-কলম প্রদান করা হয়।
জাতীয় পতাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মুহ: রাশেদুল ইসলাম নবাগত শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। শিক্ষার্থীরাও মাননীয় উপাচার্যকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানায়। এরপর বেলুন উড়িয়ে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়, যেখানে মাননীয় উপাচার্য, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন।
র্যালি শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়াম রুমে ৪র্থ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভা শুরু হয়। প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান কোরআন তেলাওয়াত করেন। এরপর দ্বিতীয় ব্যাচের হৃদি দাস গীতা পাঠ করেন। তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. মো: আব্দুল আলীম একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করেন।
ডকুমেন্টারিতে বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কিত বেশ কিছু তথ্য তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে অন্যতম হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক সফলতা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পর তাদের সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছে। সেমিস্টার চলাকালীন সময়ে শিক্ষার্থীরা শুধু লেখাপড়ায় ব্যস্ত ছিল না, বরং বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য মোট তিনটি ফিল্ড ট্রিপ সম্পন্ন করেছে। এছাড়াও তারা খেলাধুলা, নাচ-গান, কবিতা আবৃত্তির মতো সহশিক্ষা কার্যক্রমেও যুক্ত ছিল।
এরপর প্রফেসর ড. মো: আব্দুল আলীম শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নেওয়া ‘Smart Aquarium’ প্রকল্পের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন। তিনি কুড়িকৃবি (KuriAU) এর সাথে শেকৃবি (SAU) এবং ফাও (FAO) এর MoU এর অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা করেন। একই সাথে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন একাডেমিক বিল্ডিং-এর কম্পিউটার ল্যাব ও লাইব্রেরি সম্পর্কে তথ্য দেন, যেখানে ইতোমধ্যেই ১২০টিরও বেশি বিদেশি বই সংগ্রহ করা হয়েছে। এছাড়া, তিনি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা যেমন আবাসিক হল, ইন্টারনেট সেবা, NFC চিপযুক্ত আধুনিক পরিচয়পত্র, সিসিটিভি ক্যামেরা, খেলাধুলার সরঞ্জামাদি, এসি ক্লাসরুম ও ল্যাব, ২৪ ঘণ্টা স্টুডেন্ট সাপোর্ট সেন্টার এবং স্টুডেন্ট ইমেইল (কাজ চলমান) নিয়ে আলোচনা করেন।
ডকুমেন্টারি প্রদর্শন শেষে নবাগত শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে হিয়া প্রামানিক (মৎস্য অনুষদ) এবং শফিউল ইসলাম (কৃষি অনুষদ) তাদের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী নৌরিশ নবাগত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন।
এরপর উপাচার্য মহোদয় প্রথম এবং দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপদেশমূলক বক্তব্য দেন। তিনি তার বক্তব্যে ভালোভাবে লেখাপড়া করার গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মকানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার পরামর্শ দেন। কীভাবে একজন ফলপ্রসূ (productive) শিক্ষার্থী হওয়া যায়, সে বিষয়েও তিনি দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
মিশবাতুল জান্নাত মাহীর কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে পুরো অনুষ্ঠানটি শেষ হয়। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন ইরা আক্তার এবং আব্দুল্লাহ আল বাকী।