"এগ্রি এন্ড ফার্মিং অ্যাওয়ার্ডস ২০২৩" অনুষ্ঠানে প্যানেল ডিসকাশন সঞ্চালনার মাধ্যমে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ. কে. এম. জাকির হোসেন দেশবরেণ্য কৃষক, উদ্যোক্তা, গবেষক, এবং নীতিনির্ধারকদের নিয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার সূচনা করেন। এই আলোচনায় কৃষি খাতের বর্তমান প্রেক্ষাপট, চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা নিয়ে তথ্যবহুল আলোচনা হয়।
প্যানেল ডিসকাশনে প্রফেসর ড. জাকির হোসেন বলেন, "কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড। আমাদের দেশের ৬০% জনসংখ্যা কৃষির উপর নির্ভরশীল। তাই কৃষি খাতের উন্নয়ন আমাদের জাতীয় উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।" তিনি আরও বলেন, "কৃষি খাতে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। আমরা যদি প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি, এবং ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে কৃষি খাত আমাদের অর্থনীতির জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরি করতে পারে।"
প্যানেল ডিসকাশনে অন্যান্য বক্তারাও কৃষি খাতের উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরেন। তারা বলেন, কৃষি খাতের উন্নয়নে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন, গবেষণা ও উন্নয়ন, কৃষি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, এবং কৃষি সম্প্রসারণের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। তারা আরও বলেন, কৃষি খাতের উন্নয়নে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি খাতেরও নিয়োজিত হতে হবে।
নিম্নে আলোচকদের বক্তব্য দেয়া হলো:
রব স্টিভেন (ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বাংলামার্ক গ্রুপ) বলেন, আমাদের কৃষকদের আরো বেশি শিক্ষত করতে হবে, তিনি আরও বলেন আমরা সরকারের সহযোগিতায় প্রায় ৩৬০০০ এর ও বেশি মেশিন কৃষকদের মাঝে সরবরাহ করেছি। বাংলাদেশে এখন প্রায় ২২% হারভেস্টিং, ৬% রাইস-প্লান্ট মেশিনের মাধ্যমে হচ্ছে।
সাদিক জামান (মেটাল গ্রুপ) বলেন, আমাদের কৃষকদের গড় বয়স ৫০ বছরের বেশি হবে এবং নতুন কৃষক তৈরির হার অনেক কম তাই যন্ত্র ছাড়া আমাদের আর কোন উপায় নেই। সরকার কিছু কিছু যন্ত্রে ১৫% ভর্তুকি দিচ্ছে, যার মাধ্যমে কৃষকরা অনের উপকার পাচ্ছেন, এই ভর্তুকি অন্য গুরুত্বপূর্ন যন্ত্র গুলিতেও দেয়া যেতে পারে।
ফাহাদ ইফাজ (CEO, I Farmer) বলেন, আমরা কৃষকদের জন্য ওয়ান স্টপ সার্ভিস নিয়ে কাজ করছি, কৃষকরা যেন একই ছাদের নিচে সকল সেবা পান তার জন্য আমরা প্রযুক্তি তৈরি করছি। কৃষিতে আমাদের প্রিসিশন এগ্রিকালচার (Precision Agriculture) এর ব্যবহার বাড়াতে হবে, তাহলে আমরা কম খরচে বেশি ফসল উৎপাদন করতে পারব।
ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার (Executive Chairmen, BARC) বলেন, স্বাধীনতার পর আমাদের ধান উৎপাদন ছিল ১ কোটি টন আর জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি, বর্তমানে আমাদের ধান উৎপাদন হচ্ছে ৩ কোটি ৮০ লক্ষ টন আর এখন জনসংখ্যা হচ্ছে ১৭ কোটি। তিনি আরও বলেন আমরা প্রায় প্রতিদিন ৩ শত কোটি টাকার চাল খাচ্ছি। তিনি তিনটি বিষয়কে এত বড় সফলতার নিয়ামক বলেছেন, ১| সরকারের সৎ ইচ্ছা ২| সরকারের কমিটমেন্ট ৩| জাতীয় কৃষি গবেষণা কাউন্সিল কর্তৃক উদ্ভাবিত প্রযুক্তি।
ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক এমপি ( মাননীয় কৃষিমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার) বলেন, কৃষিতে যে চ্যালেঞ্জ গুলো বর্তমান আছে এবং ভবিষ্যতে আসবে সেগুলো থেকে উত্তরণের জন্য দেশী এবং বিদেশি অর্থায়নে 'কান্ট্রি ইনভেস্টমেন্ট প্লান্স' করেছি যা প্রায় ৯ বিলিয়ন ডলারের, এর মধ্যে যা যা থাকবে তা হচ্ছে: ১| এগ্রি ইন্ডাস্ট্রি ২| মাল্টিপারপাস কোল্ডস্টোরেজ ৩| ইরিগেশন ৪| ক্লাইমেট চেঞ্জ। তিনি আরো বলেন, ক্লাইমেট চেঞ্জ এর কারণে ভবিষ্যতে আমাদের বিভিন্ন ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে। আমাদেরকে সম্মিলিতভাবে সে সকল সমস্যার সমাধান বের করতে হবে। তবেই আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ রেখে যেতে পারবো।
প্যানেল ডিসকাশনটি কৃষি খাতের উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এই আলোচনার মাধ্যমে কৃষি খাতের বর্তমান প্রেক্ষাপট, চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে। এটি কৃষি খাতের উন্নয়নে নতুন উদ্যোগ এবং চিন্তাভাবনা সৃষ্টিতে সহায়ক হবে।
কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. এ. কে. এম. জাকির হোসেনের প্যানেল ডিসকাশন সঞ্চালনার মাধ্যমে কৃষি খাতের উন্নয়নে তার অসামান্য অবদানের জন্য তিনি প্রশংসা ও সম্মানের দাবিদার।